তোমরা জেনেছো সূর্য একটি নক্ষত্র। সূর্যকে কেন্দ্র করে পৃথিবীসহ আরও সাতটি গ্রহ ও অন্যান্য জ্যোতিষ্ক ঘুরছে। সূর্য এবং একে কেন্দ্র করে ঘূর্ণায়মান সকল জ্যোতিষ্ক ও ফাঁকা জায়গা নিয়ে আমাদের সৌরজগত গঠিত। সৌরজগতের বেশির ভাগ জায়গাই ফাঁকা।
সূর্যকে কেন্দ্র করে আটটি গ্রহ বিভিন্ন দূরত্বে থেকে ঘুরছে। পরের পৃষ্টায় ঘূর্ণায়মান গ্রহগুলোর কক্ষপথ দেখানো হলো এবং সৌরজগতের সদস্যদের পরিচয় দেওয়া হলো।
সূর্য: আমাদের সৌরজগতের কেন্দ্রে রয়েছে সূর্য। সূর্য অন্যান্য নক্ষত্রের মতোই জ্বলন্ত একটি গ্যাসপিন্ড। এই জ্বলন্ত গ্যাসপিন্ডে রয়েছে মূলত হাইড্রোজেন ও হিলিয়াম গ্যাস। হাইড্রোজেন গ্যাসের পরমাণু পরস্পরের সাথে যুক্ত হয়ে হিলিয়াম পরমাণুতে পরিণত হয়। এ প্রক্রিয়ায় প্রচুর শক্তি উৎপন্ন হয়। এ শক্তি তাপ ও আলোকশক্তি হিসেবে সৌরজগতে ছড়িয়ে পড়ে। এভাবেই সূর্যের কাছ থেকে আমরা তাপ ও আলো পেয়ে থাকি।
চিত্র-১২.১: সৌরজগৎ
সূর্য মাঝারি আকারের একটি নক্ষত্র। তারপরও এটির আয়তন পৃথিবীর আয়তনের তুলনায় প্রায় ১২ লক্ষ গুণ বড়ো। সূর্য পৃথিবী থেকে প্রায় ১৫ কোটি কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। তাই পৃথিবী থেকে আমরা সূর্যকে এত ছোটো দেখি।
গ্রহগুলোর পরিচয়: সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘুরছে আটটি গ্রহ। পৃথিবী এমন একটি গ্রহ। গ্রহসমূহ সাধারণত গোলাকৃতির। গ্রহগুলোতে বিভিন্ন গ্যাসীয় পদার্থ রয়েছে। কিন্তু গ্রহগুলো নিজেরা শক্তি উৎপাদন করে না। তাই কোনো গ্রহ নিজে আলো বা তাপ নিঃসরণ করে না। পৃথিবী থেকে সূর্যের অন্যান্য গ্রহকে উজ্জ্বল দেখালেও এগুলো আসলে সূর্যের আলোতে আলোকিত। গ্রহগুলোর সংক্ষিপ্ত পরিচয় হলো:
বুধ: বুধ সূর্যের সবচেয়ে কাছের গ্রহ। এতে কোনো বায়ুমণ্ডল নেই।
শুক্র: পৃথিবী থেকে সন্ধ্যায় পশ্চিম আকাশে সন্ধ্যাতারা এবং ভোরবেলায় শুকতারা রূপে যে তারাটি দেখা যায়, সেটি কোনো নক্ষত্র নয়। এটি আসলে সূর্যের একটি গ্রহ, যার নাম শুক্র। সূর্যের আলো এ গ্রহের উপরে পড়ে। তাই আমরা একে আলোকিত দেখি।
পৃথিবী: তোমরা হয়ত জান যে, কেবল পৃথিবীতেই জীবনের জন্য উপযোগী উপকরণ ও পরিবেশ রয়েছে। পৃথিবী সূর্য থেকে দূরত্বের দিক দিয়ে তৃতীয় গ্রহ।
মঙ্গল: মঙ্গলকে কখনো কখনো লাল গ্রহ বলা হয় কারণ এর পৃষ্ঠ লাল রঙের। এর পৃষ্ঠ ধূলিময় এবং খুবই পাতলা বায়ুমণ্ডল রয়েছে। মঙ্গলের মাটির নিচে পানি থাকার সম্ভাবনা আছে বলে বিজ্ঞানীরা এখন মনে করেন।
বৃহস্পতি: বৃহস্পতি সূর্যের সবচেয়ে বড়ো গ্রহ। এটিতে শুধু গ্যাসই রয়েছে, কোনো কঠিন পৃষ্ঠ নেই।
শনি: শনি গ্রহটিও কেবল গ্যাস দিয়ে তৈরি। এটিকে ঘিরে কতগুলো রিং বা আংটা রয়েছে।
ইউরেনাস: ইউরেনাস গ্যাস ও বরফ দিয়ে গঠিত।
নেপচুন: নেপচুনও অনেকটা ইউরেনাসের মতো একটি গ্রহ।
আগে প্লুটো নামক একটি জ্যোতিষ্ককে গ্রহ বলা হতো। কিন্তু ২০০৬ সালে বিজ্ঞানীরা সিদ্ধান্ত নেন যে, এটি একটি ক্ষুদ্র অসম্পূর্ণ গ্রহাণু।
উপগ্রহ: তোমরা জেনেছ সৌরজগতের গ্রহগুলো সূর্যকে কেন্দ্র করে ঘোরে। তেমনি গ্রহগুলোকে কেন্দ্র করে ঘুরছে ছোটো ছোটো উপগ্রহ। পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ চাঁদ। এটি পৃথিবীকে কেন্দ্র করে ঘুরছে। উপগ্রহগুলো আকারে গ্রহের চেয়ে অনেক ছোটো হয়। নিজেরা তাপ বা আলো উৎপন্ন করতে পারে না। এরা তাই সূর্যের আলো দ্বারা আলোকিত হয়। সূর্যের আলো চাঁদের পৃষ্ঠে পড়ে প্রতিফলিত হয় বলে আমরা চাঁদকে আলোকিত দেখি।
চাঁদ ২৭ দিন ৮ ঘন্টায় একবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করে। চাঁদ প্রাচীনকাল থেকেই মানুষের আগ্রহের বস্তু। তোমরা দেখ যে চাঁদ এক রাতে হয়তো একেবারেই দেখা যায় না যাকে আমরা অমাবস্যা বলি। তার পরের রাতে সরু এক ফালি চাঁদ পশ্চিম আকাশে অল্প সময়ের জন্য দেখা যায়। এই সরু এক ফালি চাঁদ প্রতি রাতে বড় হতে থাকে। দুই সপ্তাহ পর চাঁদকে একটি থালার মতো দেখা যায়। একে আমরা পূর্ণিমা বলি। পূর্ণিমার পরের রাত থেকে চাঁদটি আবার ছোটো হতে থাকে। এভাবে ছোটো হতে হতে আবার দুই সপ্তাহ পর চাঁদকে কোন এক রাতে এক বারের জন্যও দেখা যায়না। এভাবে ২৯ দিন ১২ ঘণ্টা পর পর আমরা অমাবস্যা ও পূর্ণিমা হতে দেখি। কেন এরকম হয়? এ প্রশ্নের উত্তর তোমরা উপরের শ্রেণিতে জানবে।
চিত্র-১২.২: নতুন চাঁদ ও পূর্ণিমার চাঁদ
চাঁদ পৃথিবীর একমাত্র প্রাকৃতিক উপগ্রহ হলেও পৃথিবীর চারপাশে ঘুরছে ৬৭০০ এর বেশি মানুষ প্রেরিত উপগ্রহ। এদেরকে কৃত্রিম উপগ্রহ বলা হয়। এ কৃত্রিম উপগ্রহগুলো বেতার ও টেলিযোগাযোগ, আবহাওয়া এবং অন্যান্য তথ্য সংগ্রহের জন্য প্রেরণ করা হয়। পৃথিবীর মতো অন্যান্য গ্রহেরও প্রাকৃতিক উপগ্রহ রয়েছে।
সৌরজগতে অন্যান্য জ্যোতিষ্ক
আমাদের সৌরজগতে সূর্য, গ্রহ ও উপগ্রহ ছাড়াও রয়েছে অন্যান্য জ্যোতিষ্ক। এরা হলো- ধূমকেতু, উল্কা ও গ্রহাণু। সূর্যকে কেন্দ্র করে এরা ঘুরছে। গ্রহের চেয়ে আকারে বেশ ছোটো কঠিন শিলাময় বা ধাতব বস্তু- এদের নাম গ্রহাণু। এরা ক্ষুদ্র গ্রহের মতো। ধূমকেতুসমূহও আমাদের সৌরজগতের অংশ। এরা কঠিন (গ্যাস, বরফ ও ধূলিকণা) পদার্থ দিয়ে তৈরি। তবে তাপ পেলে কিছু অংশ সহজেই গ্যাসে পরিণত হতে পারে। যখন ধুমকেতুসমুহ সূর্যের কাছাকাছি যায় তখন সূর্যের তাপে গ্যাসীয় ও কঠিন পদার্থ নির্গত হয়ে আকাশে ছড়িয়ে যায়। তখন এটি ঝাটার মতো দর্শনীয় লেজে পরিণত হয়। পৃথিবী থেকে এদেরকে কখনো কখনো দেখা যায়। কোনো কোনো ধূমকেতু অনেক বছর পর পর পৃথিবীর আকাশে দেখা যায়। যেমন, হ্যালির ধূমকেতু গড়ে ৭৬ বছর পর পর পৃথিবী থেকে দেখা যায়। এটিকে ১৯১০ সালে এবং ১৯৮৬ সালে দেখা গেছে। একে আবার ২০৬১ সালে দেখা যাওয়ার কথা।
চিত্র-১২.৩: ধূমকেতুর ছবি
তোমরা কি কখনো রাতের বেলায় হঠাৎ আকাশে আগুনের গোলক ছুটে যেতে দেখেছ? এরা উল্কাপিণ্ড। সূর্যের চারপাশে ঘূর্ণায়মান জ্যোতিস্ক সমুহের মধ্যে সবচেয়ে ছোটো হলো উল্কাপিণ্ড। এই ক্ষুদ্র কঠিন পিন্ড পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে পৌঁছালে বায়ুর সংস্পর্শে এসে পুড়ে যায়। এ জন্য এদেরকে অগ্নিগোলকের মতো ছুটে বা পড়ে যেতে দেখা যায়। কখনো কখনো বড়ো উল্কাপিন্ড আধপোড়া অবস্থায় পৃথিবীপৃষ্ঠে পড়ে বড়ো গর্তের সৃষ্টি করে।
common.read_more